পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

প্রতিদান

স্বামীর উপর রাগ করে ভেতরে জ্বলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে রেহানা । 
এমনিতেই তাদের দিন আনি দিন খাই টাইপের সংসার । 
ঢাকা শহরে ২ সন্তান নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থেকে তাদের পড়াশুনা করানো রেহানা আর তার তার স্বামীর জন্য খুব সহজ ব্যাপার না । 
রেহানার স্বামী ফিরোজ সাহেব বাংলাবাজারে পুরনো গল্পের বইয়ের দোকান । 
টুকটাক বেচাকেনা হয় তার ।
সেই টাকায় কোনোমতে কায়ক্লেশে সংসারের ঘানি টানেন তিনি । 

এবার স্বামীর উপর রেহানার রাগের কারন ব্যাখা করছি ।
গত সপ্তাহে ফিরোজ গ্রামের বাড়ি থেকে তার বুড়ো , অচল মাকে ঢাকায় নিয়ে এসেছে । আগে গ্রামে ছোট ছেলের সাথে থাকতো ফিরোজ সাহেবের মা । ছোট ছেলে হঠাৎ করে মালয়েশিয়া কাজ করতে চলে যায় আর ছেলের বউ চলে যায় বাপের বাড়ি ।

একা একা মা বাড়িতে থাকতে পারবে না , তাই ফিরোজ সাহেব মাকে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন । এখন থেকে উনি ফিরোজ সাহেবদের সাথেই থাকবেন ।

দুই রুমের ছোট একটা বাসা রেহানাদের । এক রুমে রেহানার দুই ছেলে থাকে , আরেক রুমে রেহানা আর ফিরোজ সাহেব থাকেন । রেহানাদের রুমের পাশেই বাথরুম । বুড়ো মানুষ , বাথরুমে ঘন ঘন যেতে হয় তাই রেহানাদের রুমেই মেঝেতে বিছানা করে ফিরোজ সাহেবের মা ঘুমান । ফ্লোরে পাতানো বিছানাটাকে আরামদায়ক করার জন্য ফিরোজ সাহেবের চেষ্টার ত্রুটি থাকে না । নীলক্ষেত থেকে ১৬০০ টাকা খরচ করে শিমুল তুলার মোটা তোষক কিনে এনেছেন তিনি । নতুন বালিশও এনেছেন দুটা ।

প্রথম দিন এসেই রেহানার শাশুড়ি বাথরুম নোংরা করে ফেলল । বুড়ো মানুষ , বাথরুম পরিস্কারের ব্যাপারে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না । প্রথম দিন অত্যন্ত বিরক্তি আর শাশুড়িকে গালিগালাজ সহকারে রেহানা বাথরুম পরিস্কার করল । কিন্তু এরপর থেকে যত দিন তার শাশুড়ি বাথরুম নোংরা করল ততবার রেহানা বুড়ো মানুষটাকে দিয়ে বাথরুম পরিস্কার করাল ।

প্রচণ্ড জ্বরে রেহানার শাশুড়ি একদিন প্রলাপ বকতে লাগলো । শরীর তার অত্যন্ত দুর্বল হয়ে গিয়েছিল । খাওয়া দাওয়া করা , গোছল করা , বাথরুম করা ইত্যাদি কাজ ওই বুড়ো মানুষটার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না । রেহানা তাকে সাহায্য তো করলই না বরং কথায় কথায় খোটা দিতে লাগলো । পুত্র বউয়ের খোটা খেয়ে বুড়ো মহিলার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ে । রেহানা সেই পানি দেখেও দেখেনা । আপাতত ব্যবসাটাকে কিছুদিনের জন্য পরিচিত এক বন্ধুর হাতে দিয়ে মায়ের সেবায় ব্যস্ত হয়ে গেল ফিরোজ সাহেব ।

ভালো কোন খাবার আনলে ছেলেমেয়েদের না দিয়ে ফিরোজ সাহেব মাকে লুকিয়ে খাওয়ান । গেল ঈদে বউকে যত টাকার শাড়ি দিয়েছেন , মায়ের শাড়ি তার চেয়েও বেশি দামে কিনেছেন তিনি । হাজার বার বললেও রেহানার জন্য তিনি সামান্য নারিকেল তেল আনতে ভুলে যান কিন্তু মায়ের জন্য তিন চার কোম্পানির তেল এনে তার মাথার কাছে রেখেছেন তিনি ।

এসব ব্যাপার দেখে রেহানার মন হিংসায় জ্বলে উঠল । পারতপক্ষে শাশুড়ির সাথে কথা না বললেই তিনি যেন বেচে যান ।

পরবর্তীতে ফিরোজের ছোট ভাই বিদেশ থেকে আসেন । মাকে আর বউকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আবার সংসার শুরু করেন তিনি ।

আজ রেহানা বেগম ৭৫ বছর বয়স্কা এক শাশুড়ি । তার উচ্চশিক্ষিত এক ছেলে বিয়ে করে আমেরিকায় সেটেল্ড হয়েছে । আরেক ছেলে ঢাকাতেই থাকে । পড়াশোনায় সুবিধা করতে না পারা এই ছেলে বাবার ব্যবসা ধরেছে । বাবা তাদের গত বছর ব্রেইন স্ট্রোকে মারা যান ।

আজ রেহানার পুত্রবধু তাকে উঠতে বসতে অপমান করে ।
একবার বাথরুম ব্যবহার করলে ৫ বার ধোয়ায় ।
জ্বরে কাতরালেও ছেলের বউ তার দিকে তাকায় না, বাড়িতে কাজ করা বুয়া তার মাথায় পানি ঢেলে দেয় ।
রেহানার ছেলে বউ বাচ্চাদের জন্য কত মজাদার খাবার আনে !
তার কিছুই রেহানার কপালে জোটে না ।
গেল ঈদে রেহানার ছেলেটা তার শাশুড়িকে তিনখানা শাড়ি দিয়েছে , অথচ রেহানা নামের অথর্ব বুড়ি যে তার মা সেকথা তার মনে থাকে না ।

২০ বছরের আগের ঘটনা মনে পড়ে রেহানার ।
রেহানার দুচোখ দিয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ে ।
রেহানার ছেলে বা ছেলের বউ তা দেখেও দেখে না ।

মানুষ যখন কোন ভালো কাজ করে তার কয়েকগুণ বেশি প্রতিদান পায় , আর
যখন কোন খারাপ কাজ করে , প্রতিদান হয় তার চেয়েও ভয়াবহ ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ei Golpo Gulo Pore Bastob Jibone Keo Practice Korte Jaben Na, Moja Nin Sudhu"
Ja khusi likhun,kintu lekhok ke ukti kore kono karap comment korben na,eta sob patoker kache onurodh,kono other site link post korben na,tahole coment publish kora hobe na...................