পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৪

কানামাছি

মা ফোন করেই কান্নাকাটি শুরু করে দিলো,
- বাবা, তাহলে কি তোর আর আসা হচ্ছে না? তোকে ছাড়া কোরবানি করেছি আমরা কখনও?
- কি আর করবে মা? এখন থেকে অভ্যাস করতে হবে! তাছাড়া আব্বা আছে, রিমি আছে। আমার জন্য চিন্তা করো না। নতুন চাকরি, কিভাবে ছুটি চায় বলো? আমাদের কোম্পানি তে আবার ঈদ

উৎসব গুলোতে বিবাহিত দের অগ্রাধিকার বেশি দেয় ছুটির ক্ষেত্রে।
- কেন এটা আবার কেমন নিয়ম! অবিবাহিত দের শখ নাই মা বাবার সাথে ঈদ করার?
- আচ্ছা মা, এখন রাখি পরে কথা হবে।

মাকে চান্সে বিয়ের প্রয়োজনীয়তা টা বুঝিয়ে দিলাম! কিন্তু কাজ তো তেমন হলো বলে মনে হয়না। ভাবলাম হয়তো মা বলবে - আচ্ছা তাহলে এই নিয়ম তোর কোম্পানি তে! আমিও আমার ছেলেকে বিয়ে করিয়ে দিব শীঘ্রই দেখি আগামী ঈদে তোর ছুটি কিভাবে ওরা আটকায়?
না মা'র জেদ দেখলাম না এ ব্যপারে অথচ আমার মা অনেক জেদি আর এর ভুক্তভোগী আমার বাপজান ই শুধু। ছোট বেলা তো বটেই এখনো দুজনই আমাকে পক্ষে টানতে থাকে। আমি পড়ি বেকায়দায় একবার মা আরেকবার বাবা।

একবার বাবা মাছ কিনে চায়ের দোকানে কথা বলতে বলতে ভুলে গেলেন মাছের কথা! যখন মনে পড়লো ততক্ষনে মাছ আধাপঁচা। মাছ রান্নার পর যখন খেতে বসলাম তখন ঘটলো ঘটনা। মুখ বাকা করে আব্বা বলে উঠলো,
- কি রান্না করলে এটা! মাছ না ভর্তা ? এত নরম করে কেউ মাছ রান্না করে!

- পঁচা মাছ রান্না করলে সেটা শক্ত হবে আবার? আনবে তো পঁচা গলা সব, স্বাদ না হলে আমার দোষ!
- আমি পঁচা গলা আনি? এই রবি তুই বলতো চুলায় বেশি আগুন বেশি দেয়াতে মাছ নরম হয়েছে না!
বাবার অভিযোগ শেষ না হতেই মা শুরু করলেন,
- এই রবি মাছ এর থেকে পঁচা গন্ধ পাস না?
মা, মাছ পঁচা বলেতো মনে হয়না!

আমার কথা শুনে মা তো তব্দা! বাজার থেকে আসার সময় বাবা যে চিপস এর প্যাকেট টা এনে দিয়েছিলো এটা যে তার ই ফসল মা ঠিকই জানেন।
ঠিক আছে কাল থেকে বাপ বেটা মিলেই রান্না করিয়েন। আপনাদের আগুন ও বাচবে আর এতো নরম তরকারী ও খাওয়া লাগবেনা।
আরে মা! কি বলো, বাবা বললেই হবে? আমার কাছে মাছ পঁচা মনে হয়নি আর রান্না? কি বলবো এটা তো তোমার এ যাবত কালের সেরা রান্না!

আরেকবার হয়েছে কি, সকাল বেলা আমাদের জন্য চিতই পিঠা বানাচ্ছেন মা। আমি আর বাবা বসে খাচ্ছিলাম পাশে। মা একটার বেশি খায়না পিঠা। শুধু মায়ের পিঠা টা বানানো বাকি আছে, এমন সময় আম্মার ফোনটা বেজে উঠলো। আম্মার ফোনের ডিসপ্লে নষ্ট, কলার আইডি শো করেনা। করলেও মা আমার শুধু রিসিভ করাটা ই জানেন। আম্মাজান ফোন রিসিভ করতে সামনের রুমে যেতেই বাবা আমাকে বললেন লবনের বয়াম টা দিতে। বয়াম টা দিতেই আধমুঠো লব দিয়ে দিলেন পিঠার খামির গুলোতে।

আম্মার ফোনে কল টা আব্বা দিয়েছিলেন আর উনি ফোনের কাছে যেতেই লাইন টা কেটে দিয়ে লবনের কাজ টা ঘটিয়ে ফেললেন। আব্বার সাথে আমার চুক্তি করা আছে না বলার কথা!
মা এসে পিঠা টি বানালেন, তরকারি তে চুবিয়ে যখন মুখে দিলেন মুখ টা তার বাঁকা হয়ে গেলো!

একি আজ এত লবন কেন পিঠাতে! তোমরা ও তো কিছু বলনি!
বাবা মুখ খুললেন, আমি বলতে যায় পিঠাতে লবন বেশি হয়েছে, আর ঘরে সকাল সকাল যুদ্ধ শুরু হোক! যুদ্ধ করার চেয়ে লবন খেয়ে থাকা অনেক ভালো! ভাল্লাগছে তোমার পিঠা গুলো। অনেক ভাল্লাগছে!

মা কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। বাবা উঠে গিয়ে বাজার থেকে আনা টোস্ট বিস্কুট এর প্যাকেট টা এনে দিলেন। আর বললেন আজ বিস্কুট আর চা ই খাও। এই লবন পিঠা তোমার খাওয়া লাগবেনা, আমাদের রোজ খেতে খেতে অভ্যাস হয়ে গেছে। আমাদের জন্য ও চা বানাও, এইবার ও দেখিও আবার চিনির বদলে লবন দিতে যেওনা। মা চুপচাপ বাবার কথায় কান দিতে লাগলেন।
চল রবি আমরা ও ঘরে যায় বলে বাবা আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন। ও ঘরে গিয়ে বাবা হাসতে হাসতে শেষ। আমাকে বললেন খবরদার তোর মাকে বলিস না। বাবাকে অভয় দিলাম যে বলব না।

মাকে এ ঘরের সামনে দিয়ে হেটে যেতে দেখলাম, তবে আমাদের কথা মনেহয় শুনতে পাননি, পেলে মার যা জেদ বাবার খবর ছিল। সেদিন মা খুব চুপচাপ ভাবে পার করলেন। পরদিন যে এ দূর্গতি অপেক্ষা করছে কে জানতো!

ভোরে একই পিঠা বানাতে লাগলেন মা। আর আমি আর বাবা যথারীতি খেতে বসলাম। পিঠা মুখে দিয়ে বাবা আমার দিকে আর আমি বাবার দিকে তাকিয়ে আছি, না পারিছিনা গিলতে! না পারছি ফেলতে! কিভাবে গিলবো এ যে লবনে ভরপুর।

মা বাবাকে বলতে লাগলেন, আজ লবন ঠিক আছেনা? ঠিক কালকের সমপরিমাণ দিয়েছি, তোমাদের তো আবার এসব খেতে খেতে অভ্যাস, একটু বেশি হলেও সমস্যা হবেনা, খেতে পারবে!
আমার দিকে তাকিয়ে মা বললেন, কি হে বাপের সাগরেদ কেমন হয়েছে পিঠা!? একটা ও ফেলতে পারবিনা সব খেতে হবে, তুই না পারলে তোর গুলো ও তোর বাপে খাবে!

তোমরা ভেবোছো আমি কিচ্ছু জানিনা? কাল আমাকে চা বানাতে বলে বাপ বেটা মিলে কি হাসাহাসি ও ঘরে গিয়ে! ভাবছো আমি কিছু শুনিনি? সব শুনেছি কাল কিছু বলিনি, আজ জবাব দিব বলে। একটা পিঠাও যেন নষ্ট না হয়, সব খেতে হবে, এই ধমক দিয়ে মা বেরিয়ে গেলেন।
এভাবেই বাবা মাকে আমি সামলে আসছি ছোট বেলা থেকেই। আমার ছোট আরও একটা বোন থাকলেও আমার সাথেই বাবা মায়ের সখ্যতা বেশি। চাকরি হবার পর এবার ই প্রথম কোরবান। অনেক খুশি লাগছে আমার টাকাতেই এবারের কোরবানি দেয়া হবে। নিজে থাকতে পারবনা জানানোর পর থেকেই মা'র মন খারাপ।

বাবা মাকে শান্তনা দিতে লাগলেন আরে তোমার ছেলে ফাঁকা ঢাকা ঢাকা তে অনেক মজা করবে, চিন্তা করোনা তো।
আমি বাড়ি থাকলে সবার আগে গরু বা ছাগল যা কিনি না কেন আগেই কিনে ফেলতাম। সপ্তাহ জুড়ে এটাকে নিয়েই কাটতো সময়। অন্যরকম মজা মৌসুমি রাখাল হওয়া। এবার আমি নেই তাই বাবা মা সিদ্ধান্ত দিলেন কোরবানির আগের রাতেই কিনবেন।

পরদিন সকালে কোরবান। রাত নয়টা দিকে বাবা বিমর্ষ মন নিয়ে ঘরে ফিরে এলেন। মা জানতে চাইলেন কি সমস্যা।
- আর বলোনা আমাদের কোরবানির ছাগল টা রাশেদের দোকানের পাশে বেধে রেখে, আমি গিয়েছিলাম মসলা কিনতে। রাশেদ কে বলেছিলাম নজর রাখতে, ওর দোকানে ও ঝামেলা, মসলা নিয়ে এসে দেখি ছাগল টা নেই!

- নেই মানে?
- নেই মানে চুরি হয়ে গেছে। কি যুগ আসলো কোরবানির পশু ও রেহাই পাচ্ছেনা চোরের হাত থেকে।
- যুগের দোষ দিচ্ছো কেন? নিজের আক্কেল সেলামীর কথা স্বীকার করতে লজ্জা করে?
- আচ্ছা রাত পোহালে কোরবান, এখন ঝগড়া করোনা তো, দেখি সকালে হাসমত ভাইয়ের কাছ থেকে একটা ছাগল না নিয়ে নিব, ভোরে ডেকে দিও আমাকে, এখন তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি চল।

কাল তো ভোরে উঠা লাগবে। আর দেখো চোরের যদি দয়ামায়া হয়ে যায় তাহলে হয়তো ফেরত ও তো দিতে পারে ছাগল টা।
- আহারে, ফেরত দেবার জন্য চুরি করেছে চোরে জীবন বাজি রেখে। সব তো তোমার মতো আহাম্মক।
আব্বা কথা না বাড়িয়ে শুয়ে গেলেন। ফজরের নামায পড়তে উঠে আম্মার চিতকার। কই উঠো, দেখো কি ঘটনা ঘটে গেছে।
আব্বা ঘুমুঘুমু কন্ঠ নিয়ে বলতে লাগলেন -
- কি হয়েছে?
- আরে পাক ঘরের পাশে একটা ছাগল বাধা, দেখে যাওতো।

- আরে এটাই আমার কেনা ছাগল। তোমাকে বলেছিলাম না চোরের ও দয়ামায়া থাকে! তুমি তো শুনতেই চাওনি।
শুনো রাতে কি হয়েছিল, তুমিতো ঘুমে বেহুশ নাকি খাসির মাংস না খেতে পাবার আশংকায় অজ্ঞান হয়েছিলে রাতে। মাঝরাতে দরজায় ঠকঠক শব্দ! উঠে গিয়ে দেখি ছাগল হাতে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। আমাকে বলে আপনার ছাগল টা চুরি করেছিলাম। কিন্ত মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না, তাই ফেরত দিতে এলাম।
এমন ভালো চোর কে এতো রাতে খালি মুখে কিভাবে বিদায় দেই বলো! তাই রবির রুমে ঘুমাতে দিয়েছি, ছাগল তো দেখলে যাও এবার চোর টা ও দেখে আসো।

আমি এতক্ষণ সব শুনছিলাম, মা আমার রুমে চোর দেখতে আসার সাথেই আমি মাকে জড়িয়ে ধরে হাসতে শুরু করলাম, মা তো আমাকে দেখে অবাক,!! একদম কেঁদে দিলেন।
আর বলতে লাগলেন এই ঈদের দিনেও বাপ বেটা আমার সাথে কানামাছি খেললি তোরা!?
- মা, শুধু বাপ বেটা না, এবারের খেলায় তোমার আদরের বেটিও ছিল। ও ই তো রাতে আমাকে দরজা খুলে দিয়েছিল।

আমার ছুটি আগেই হয়েছিল , তখনি আব্বা কে ফোন করে জানিয়েছিলাম। তোমার সাথে একটু কানামাছি খেলার জন্য জানাইনি আমরা। কাল রাতে যখন বাজারে এসে পৌছাই, আব্বা ছাগল টি রাশেদের কাছে রেখে আসে, পুরনো অনেক বন্ধু বান্ধব একত্রিত হয়েছিল বাজারে কাল, সবার সাথে আড্ডা দিয়ে বারোটার পর ঘরে আসি। প্ল্যান অনুযায়ী রিমা দরজা খুলে দেয়। ছাগল টা রান্না ঘরের পাশেই বেধে রাখি যেন সকালেই উঠেই তোমার নজরে পড়ে।
তাইতো বলি তোর ছুটি না পাবার খবরে তোর বাপের বিন্দু মাত্র আফসোস নাই কেন!! রিমার দিকে কটমট করে তাকায় মা, শেষ পর্যন্ত তুই ও এদের দলে? আমার দলে কেউ রইলো না আর! আমি তোর বিয়ে দিয়েই আমার বৌমা কে দলে ভিড়িয়ে নিব, তখন তোদের সাথেই কানামাছি খেলবো আমি দেখে নিস!

মা'র কথায় খুশিতে টগবগ হয়ে বললাম, তা দেখা যাবে মা, এখন ক্ষুধা লাগছে, অনেক দিন চিতই পিঠা খায়না, পিঠা বানাও।
আচ্ছা, যা তুই হাত মুখ ধুয়ে আয়। আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি।
আব্বা পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে উঠলেন, লবন টা একটু খেয়াল করে দিও,
মা, কি জানি বলতে এগিয়ে আসছিল বাবার দিকে, আমি এগিয়ে গিয়ে মাকে রান্না ঘরের দিকে নিয়ে গেলাম, এবার একটু মায়ের পক্ষে থাকা জরুরি, মা বলেছে তার একজন সাপোর্টার নিয়ে আসবেন ....

লেখক : জাহিদুল ইসলাম জাহিদ




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ei Golpo Gulo Pore Bastob Jibone Keo Practice Korte Jaben Na, Moja Nin Sudhu"
Ja khusi likhun,kintu lekhok ke ukti kore kono karap comment korben na,eta sob patoker kache onurodh,kono other site link post korben na,tahole coment publish kora hobe na...................