পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৪

অপূরণীয়

গোমড়া মুখে স্কুল থেকে বের হচ্ছে অণু; স্কুলটাকে অনেক বেশি ভালবাসে; সবসময় স্কুলে থাকতে ইচ্ছে করে; সবার সাথে খেলতে ইচ্ছে করে; স্কুলটা যে কেন ছুটি হয়! সাপ্তাহিক ছুটিটা মানা যায়। কিন্তু রোজা এবং ঈদের জন্য পুরো একমাস ছয় দিন ছুটি! এতদিন বাসায় বসে বসে কি করবে! হয়ত এমন সব অদ্ভুত চিন্তা ভাবনার মধ্যেই আমার সাথে দেখা হয়ে গেল ওর। ... না, অণু কোন স্কুল ছাত্রী নয়। এই স্কুলের একজন শিক্ষিকা। ক্লাস নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় প্রতিদিনই কিছু উদ্ভট চিন্তা করে। এমনকি সব ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল থেকে বের না হওয়া পর্যন্ত অণুও বের হয় না। অণুর ডাকে আমি বর্তমানে ফিরে আসি।

-জানো, আজকে থেকে লম্বা ছুটি।
-হুম, শুনলাম। ছাত্র-ছাত্রীরা বলাবলি করছিল।
-এত্ত লম্বা ছুটি দিল কেন? একটু কমও তো দিতে পারত।
-রোজা রেখে ক্লাস করতে ছাত্র-ছাত্রীদের অসুবিধা হবে না?
-অনেকটা ঠিক। কিন্তু আমি তো ..........
-আচ্ছা বাদ দাও। আইসক্রিম খাবে? আজকেই কিন্তু সুযোগ। কাল থেকে খেতে দিব না। রোজার মধ্যে জ্বর-সর্দি-কাশি হোক তা আমি চাই না।
-[একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে] হ্যাঁ, খাবো। অনেকগুলো কোণ আইসক্রিম নিয়ে আসবা।
-অসম্ভব। একটার বেশি কখনই না।
-তাহলে কিন্তু রাগ করব।
-তুমি রাগ করলে আমি ভাঙাবো।
-এইবার তোমার মন ভুলানো কথায় আর ভুলছি না।
-তাহলে আর কি! বিয়ে আরেকটা করে নিব।
-আহ্! শখ কত! নিজেকে আয়নায় দেখেছ? কোন পাগলী তোমাকে বিয়ে করবে! -তুমিই তো সেই পাগলী।
-[খানিকটা নিরবতার পর] আমি তোমার পাগলী হয়েই থাকতে চাই। সারাজীবন। [আমার কাঁধে মাথা দিয়ে রাখে]
-আইসক্রিম নিয়ে আসব?
-না, এখন এইভাবেই থাকতে ভাল লাগছে।
-কোথাও যাবা? -না। বাসাতেই যাই।
-আচ্ছা।

মন খারাপ হলে অণুকে অনেক মায়াবী লাগে। আবার ওর মন খারাপ ঠিক করতে হলে ওর সাথে দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া অথবা ওর কোন পছন্দনীয় জায়গায় নিয়ে গেলেই সব ঠিক। কিন্তু এই প্রখর রোদে দুপুর বেলা কোথাও নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না। বাসাতেই যাই। তারপর কথা বলতে বলতে ঠিক করে নিব।

আমার সাথে অণুর পরিচয় হয় পাঁচ বছর আগে। পরিচয় বললে ভুল হবে। কাকতালীয় ভাবে অনেকটা দেখা হওয়ার মত। পদ্মা নদীর তীরে ফুচকার দোকানে। ফুচকা খেতে খেতে ফোনে কার সাথে যেন তুমুল ঝগড়া করছিল। ওর ফ্রেন্ডরা ওকে থামাতে চাইলেও থামাতে পারছে না। গলাবাজির পরিমাণ আরও বেড়েই চলেছে। দেখতে অসম্ভব সুন্দর না হলেও অতটা খারাপও না। কেন জানি দেখতে ভালই লাগছিল। আমার সাথে দুইজন ফ্রেন্ড ছিল। তিনজন মিলে ওর কথাবার্তা নিয়ে ভালই মজা করছি। মেয়েটা ফোনেই একটা ফোন নাম্বার বলতে লাগে। আমি তো তড়িঘড়ি করে নম্বরটা আমার ফোনে তুলে নিই। ওরা সবাই উঠে চলে যায়। আমরা তিনজন বলাবলি করতে থাকি, নাম্বারটা কার? ঐ মেয়েটার হতে পারে নাও পারে। ভাগ্য পরীক্ষা করতে অসুবিধা কি! নাম্বারটাতে টোকা তো দিবই। কয়েকদিন পর গভীর রাতে ফোন করি। মিস কল দিব ভেবেও মিসকল দেওয়া হল না। মেয়েটা ফোন ধরে নেয়! নিজেই বলতে শুরু করে,

-এত রাতে আননোন নাম্বার থেকে ফোন দেন কেন? [কথা শুনেই মোটামুটি সিওর এই মেয়ে সেই মেয়ে]
-না, মানে... [আমি তখন এসব বিষয়ে অজ্ঞ]
-মানে মানে করলে তো হবে না। ফোন যখন দিছেন তখন কি বলবেন বলেন।
-এত রাতে জেগে আছেন?
-আমি জাগলে আপনার সমস্যা কি!
-শরীর খারাপ করতে পারে।
-আমার শরীর খারাপ হয় না। আপনি বলুন আপনি কেন জেগে আছেন?
-আপনাকে ফোন দিব বলে।
-দেওয়া শেষ। এখন ঘুমান।
-আরেকটু কথা বললে.....
-থামলেন কেন? বলুন।
-না কিছু না।
-আপনি কি করেন?
-পড়াশুনা।
-আমার নাম্বার কোথায় থেকে পাইছেন?
-আপনিই তো দিলেন।
-কবে? আমি কি আপনাকে চিনি?
-আপনি চিনেন না। তবে আমি চিনি।
-কিভাবে?
-ফুচকার দোকান, পদ্মার পাড়। আপনি তো অনেক ধমকাতে পারেন।
-আরে না। সেদিন অনেক বেশি মাথা গরম ছিল। কিন্তু আমার নাম্বার কি করে পেলেন সেটা তো বললেন না।
-আপনার সেইদিনের কথার মাঝেই আপনি বলেছিলেন।
-আপনি কি আড়ি পেতে ছিলেন?
-আপনি যত জোরে বলছিলেন তাতে তো আরও কয়েকজন মানুষের এই নাম্বার পাওয়ার কথা।
-আর বলবেন না! রাগলে মাথা ঠিক থাকে না।
-এখন তো ভাল আছেন। এখন একটু ভালমত কথা বলেন শুনি।
-কেন বলব? আমি তো আপনাকে চিনিই না।
-চিনতে দোষ কি! চিনে ফেলুন।

.....অনেকটা এমনই কথাবার্তার মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্কের শুরু হয়েছিল। ফোনে কথা, মেসেজিং, দেখা করা, ঘুরে বেড়ানো এসব প্রায়ই হত। সম্পর্ক ভালবাসাতে রূপ নিয়েছিল। অণুকে প্রথমে যতটা রাগী ভেবেছিলাম ও ততটা রাগী নয়। আসলে ও রাগতেই জানে না। রাগের অভিনয় করে মাত্র। ওকে পাওয়ার পর বুঝেছিলাম, ভালবাসা কি। এর অর্থ কি। তাই ওকে ছাড়া আমার সামনের জীবন পাড়ি দেওয়া অসম্ভব ছিল। পারিবারিক কোনো ঝামেলা হয় নি। আমাদের দুজনকেই মেনে নিয়েছিল। সে জন্য আমাদের তেমন কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় নি। কিন্তু কে জানত, সামনে কি আছে?

অণুর জীবনে এক দুর্ঘটনা ঘটে। সিরিয়াস অবস্থা। ও বাঁচবে কিনা এটা নিয়েও ছিল সংশয়। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ও বেঁচে যায়। কিন্তু ডাক্তার জানায়, ও কোনোদিন মা হতে পারবে না। এ কথা যে কোনো মেয়ের কাছেই সবচেয়ে দুঃখজনক। অণুর নিজেকে সামলাতে সময় লাগে। ও আমাকে বিয়ে করতেও সংকোচবোধ করে। ওকে অনেকভাবে বুঝানোর পর রাজি হয়। বিয়েটা হয়।

আমি হয়ত বাবা হতে পারব না। কিন্তু আমার চেয়ে বেশি কষ্ট অণুর। বেঁচে থাকার জন্য ভালবাসা কম না। হয়ত কিছু অংশ অপূর্ণ থাকবে কিন্তু তাই বলে জীবনটাতো থেমে থাকবে না। একজন জীবনে সবকিছু পায় না। আমাদের ক্ষেত্রেও হয়ত তেমনই। অণু নিজেকে হালকা করার জন্য ছোটদের এই স্কুলে পড়ায়। তাদের কথাবার্তা শুনে হাসে। একেকজনের বায়না দেখে বিস্মিত হয়। এভাবে যদি সে নিজের জীবনের কিছুটা অংশ ভুলে থাকতে পারে তবে ক্ষতি কি! হ্যাঁ, আমরা ভাল থাকব। এই বিশ্বাস নিয়েই একে অন্যকে আঁকড়ে ধরে আছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ei Golpo Gulo Pore Bastob Jibone Keo Practice Korte Jaben Na, Moja Nin Sudhu"
Ja khusi likhun,kintu lekhok ke ukti kore kono karap comment korben na,eta sob patoker kache onurodh,kono other site link post korben na,tahole coment publish kora hobe na...................