জ্ঞান ফিরে আসতেই ফের হাসপাতালের কটু গন্ধটা নাকে লাগল । কেমন বিচ্ছিরি একটা গন্ধ ! মুক্তভাবে শ্বাসও নেয়া যায় না । বেশ কয়েকদিন যাবত এরকম অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে । ক’বার জ্ঞান হারিয়েছি খেয়াল নেই। ৩-৪ বার হবে হয়ত । কখন ঘুমিয়ে থাকি আর কখন জ্ঞান থাকেনা এখন আর আমার বোধগম্য হয়না । অনুমানের ওপর বের করা ।
আজকাল ঠিক তেমন কিছু চিন্তাও করতে পারিনা । পুরনো কিছু স্মৃতি মনে পড়ে অগোচরে । তবে তেমন একটা না । অনেক চাপ পড়ে মস্তিস্কে । মাথাটা বেশ যন্ত্রণা করছে । আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করলাম । দপ করে চোখে আলো লেগে মস্তিষ্কের সাথে লড়াই শুরু করে দিল। এ জগতে লড়াই বাদে কিছু নেই। যুদ্ধেও যেমন লড়াই আছে , প্রিয়তমার ভালবাসাতেও লড়াই আছে। পার্থক্য একটাই, একেকটার ধরন আলাদা ।
বা’ পাশ থেকে কথা বলার শব্দ শোনা যাচ্ছে । ভলিউম স্কেল আপ ডাউন করছে । নিশ্চয়ই মিষ্টি হবে । মেয়েটা এভাবে কথা বলে । তার উপর মেয়েটার একা কথা বলার বাতিক আছে । চুপচাপ থাকতে পারেনা । ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ যে কোন বিষয়ে সে একাই নিজের সাথে কথা বলে শেষ করে ফেলবে । তার উচিৎ ছিল বিতার্কিক হওয়া । তবে উচিৎ অনুচিত বিষয়টা ক’জন ভাবে !
আমি জেগে আছি বুঝতে পারলে হুলস্থুর কাণ্ড শুরু করে দিত হয়ত আবারো । ডাক্তার ডেকে এনে আমার অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া , নার্সকে ডেকে মেডিসিনের সময় জিগ্যেস করা, কিছুক্ষণ পর পর এটা খেতে দেয়া ওটা খেতে দেয়া , বার বার জিগ্যেস করা কেমন লাগছে এখন , কিছু লাগবে কিনা !
মিষ্টি অনেক কথা বলে । আমার সাথে যতক্ষণ থাকবে ননস্টপ কথা বলেই যাবে । আমি কথা বলি না বলি সমস্যা নেই , কিন্তু সে বলবে । এত কথা সে কোথায় পায় শুধু সেই জানে । হাসপাতালে আসার পর থেকে শুধু আমার বিষয়েই কথা বলছে । বাবা বলেছে নিশ্চয়ই ! তা না হলে তার জানার কথা না । সে যখন কথা বলবে তখন আমার জন্য অলিখিত নিয়ম হচ্ছে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে আর কথায় কথায় হু হাঁ করা বাধ্যতামুলক ।
তবে এখানে হু হা না করলেও তাকিয়ে থাকি তার দিকে । তার চোখের দিকে । অসম্ভব মায়াবি তার চোখযুগল । মনে হয় যেন বিধাতা অনেক সময় নিয়ে নিপুন কারুকার্যে সাজিয়ে তুলেছেন তার চোখদুটো । গভীরতা আছে অনেক । সেই গভীরতায় হারিয়ে যেতে আমার কোনও দ্বিধা নেই । মিষ্টির একটা গুন যেটা আমার কাছে ভাল লাগে তা হচ্ছে সে আমাকে কখনই একা অনুভব হতে দেয়না । সেটা যেভাবেই হোক । সেই প্রথম দিন থেকে শুরু করে আজ অবধি ।
মা ছোট বেলায় মারা যাবার পর থেকে বাবার হাত ধরে আমার পথচলা । মায়ের আদর তেমন একটা না পেলেও বাবার অঢেল স্নেহ পেয়েছি। বাবা আমার এবং আমি বাবার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন । আমরা একে অন্যের সবচেয়ে ভালবন্ধু । বন্ধুর মতই সব কিছু শেয়ার করি একে অন্যকে । সারাদিন কে কি করলাম রাতের খাবারের টেবিলে এ নিয়ে খোশগল্পে মেতে উঠতাম ।
সবচেয়ে বেশি মজা হত আমার বন্ধুদের নিয়ে আলোচনায়। সেদিনের একটা ঘটনা , ক্লাসের এক বন্ধুর সাথে বাজি ধরেছি যে ক্লাসের সবচেয়ে নিরীহ ছেলেটাকে কোনো কারন ছাড়াই চড় মারব । তো কথা মত ছেলেটার সামনে গেলাম। মায়া লাগল তার চেহারা দেখে । তারপরও যেহেতু বাজিতে জিততে হবে তাই ছেলেটাকে বললাম দেখ ভাই, বাজি লাগছি । এখন তুই কো-অপারেট করলে আস্তে মারব আর সাথে বাজির ৫০% টাকা তোর ।
আর যদি কো-অপারেট না করিস , চিল্লাচিল্লি করিস, তো কিছুই পাবিনা সাথে জোরে একটা চর খাবি । সহজসরল চেহারার ছেলেটার চোখে পানি জমতে দেখেছিলাম । ছেলেটার চোখ ছলছল করছিল । বাজি হেরেছিলাম তাও ছেলেটাকে মারিনি। বাবা শুনে হেসেছিল আর বলেছিল আমার ২য় কাজের জন্য তিনি গর্বিত । তবে ১ম কাজের জন্য বিরক্ত। টাকার দরকার পড়লে এইসব কাজ যাতে না করি ।
বাবার এই কথার রেশ ধরেই মাঝে মধ্যে বাবাকে বিরক্ত করতে মজা পেতাম । কিন্তু মনে হয়না বাবা কখনও বিরক্ত বোধ করেছেন । যদি কখনও এমন হয়েছে পকেটে টাকা নেই , তো সোজা বাবার অফিসে চলে যেতাম । কাজে ব্যস্ত থাকুক না থাকুক সোজা রুমে ঢুকে বলতাম 'পকেটে টাকা নাই, টাকা দাও। না দিলে অফিসে আজকে ধর্মঘট' । বাবা হাসতেন , তার চেয়ারটায় বসতে দিতেন বলতেন স্যার কিছু খাবেন কিনা ! কখনও খেতাম কখনও খেতাম না । হাসি মুখে টাকা দিয়ে দিতেন আর বলতেন স্যার সময় পেলেই আবার আসবেন ।
মাঝে মধ্যে ঘুরতে চলে যেতাম বাপ বেটা মিলে । আমাদের অসংখ্য ছবি আছে ট্যুরের । ছবি দেখলে মনে হত মা পাশে থাকলে হয়ত জীবনটা অন্য রকম হতে পারত । তবুও আফসোস নেই । বিধাতার হিসাব এবং তার বান্দার হিসাব মিলেনা কখনও । এমন কখনও যদি হয়েছে যে আমি কখনও কোনও মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে আছি তাহলেও তা বাবাকে জানাতাম । আমাদের খুনসুটি গুলো শুনে বাবা হাসতেন, মজা পেতেন। আমার বিষয় ছিল আমি আর যাই করি বাবাকে জানিয়ে করব এবং তার নামে কখনও কলংক আসতে দিবনা আমার জন্য ।
ডাক্তার এসে দেখে গেল । কেমন লাগছে জিগ্যেস করতেই হেসে বললাম , এখন একটু ভাল লাগছে । তবে পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটা যে হারে কথা বলে মনে হয় কোন না কোন দিন কানের তালা চাবি ছাড়াই খুলে যাবে । মিষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা হাসছে । অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটা রাগেনি ।
আগে কখনও কিছু বললে অভিমানি হয়ে যেত , গোমড়া মুখে বসে থাকত । তারপর কখনও স্যরি বললে এক গাল হেসে তার রাজ্যের কথার ভাণ্ডার খুলে বসত । ডাক্তার বলল , ‘আপনি খুবই ভাগ্যবান যে এরকম একটা মানুষ আপনি পেয়েছেন। সারাটাক্ষণ আপনার পাশে পাশে থাকে । একটা মুহূর্তও আপনাকে তার চোখের আরাল হতে দেয়না। ’
মুচকি হাসলাম । দরজার ওপারে দেখলাম বাবা দাড়িয়ে আছেন । চোখটা ছলছল করছে উনার । আমি তাকিয়েছি দেখে অন্যদিকে ফিরে তাকালেন । আচ্ছা বাবা কি কাঁদছে ? বাবাকে কখনও কাঁদতে দেখিনি। আচ্ছা বাবা কাঁদছে কেন ? ডাক্তারকে জিগ্যেস করলাম , আমার অসুখটা কি ? মাথা এত যন্ত্রনা করে কেন ? ডাক্তার বলল , ‘ তেমন বড় কিছু না ।
ঠিক হয়ে যাবে ।’ আমার মনে হল ডাক্তার কিছু লুকালো আমার কাছে । এতটুকু বোধশক্তি তো আমার আছেই এটা বুঝার জন্য ! পাশে তাকিয়ে দেখলাম মিষ্টি জানালার ধারে দাড়িয়ে উদাস ভঙ্গিতে বাইরে তাকিয়ে আছে । সেও কি কাঁদছে ? বোঝা যাচ্ছে না । অন্তরের ক্রন্দন বড় বেশি কষ্টের ।
বহুদিন হয়ে গেছে বন্ধু আর এলাকার ভাইদের সাথে দেখা হয়না । তাদের কাছে আমার পরিচিতি অনেকটা বিশেষ ধরনের। “আমার সারাজীবনে প্রেমের আনাগনা এতই বেশি ছিল যে একলা থাকার সময় পাইনি” আমার অতি প্রচলিত উক্তিটা তারা এখন নিজেদের জীবনে ফলাতে চেষ্টা চালাচ্ছে । ফলাফল ? বোতল ছাড়া দেবদাস !একাই থেকে যাচ্ছে । বিষয়টা হাস্যকরই বটে ।
একটা বিষয়ে বরাবরই বন্ধু এবং ভাইদের সাথে আমার তর্ক লাগত । বিষয়টা হচ্ছে প্রেম এবং ভালবাসার ভিন্নতা । প্রেম হচ্ছে বহুমুখী । যে কেউ সময়ে অসময়ে যার তার প্রেমে পড়তে পারে । বিষয়টা হচ্ছে মোহের মত। মোহ কেটে গেলে যেমন আকর্ষণ কমে যায় ঠিক তেমনই একটা সময় গেলে সেই প্রেম প্রেম ভাব উবে যায় । । তবে ভালবাসা হচ্ছে কারো প্রেমময় সম্পর্কের পরিনতি , যেটা স্থায়ী ।
কিন্তু ছোট যারা আছে তারা আমার কথা শুনে হাসাহাসি করে আর টিপ্পনী কাটে একে অপরকে । আমি বলতাম , তোদের অভিজ্ঞতা কমতো ! তোরা হচ্ছিস বাচ্চা পোলাপান , এইসব বিষয়ে তোরা বুঝবিনা । তাদের দেখানোর জন্য কোন এক বড় ভাইকে আমার কথার প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য যদি বলতাম ভাই, কথা সত্যি কিনা ? তখন তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতেন আমিও এককালে ভালবাসতাম একজনরে ।
তিনি শুরু করতেন তার কথা আর আমরা তার পিছন দিয়ে একে একে বের হয়ে যেতাম । ভালবাসায় গদগদ হয়ে ভাইয়েরা হয়েছে আটখানা আর এই ছোট ভাইরা প্রেমে পড়ে ভালবাসা আদায় করার চেষ্টা চালাচ্ছে বারোয়ানা । আমার কোন প্রেমই বেশিদিন টিকেনি বিচিত্র সব কারনে । তবে বিদায়ের বেলায় কেউ কখনও গোমরা মুখে ফিরিনি । হাসিমুখে দা ইন্ড হয়েছে সব।
নিজে হাসতে আর মানুষকে হাসাতে ভালবাসি বলেই সম্ভব হয়েছে । তবে সবচেয়ে বেশি মজা লাগে আর হাসি পায় জেরিনের সাথে সম্পর্কে ইতির কথা মনে পড়লে । বেচারা তার বাবার সাথে দেখা করাতে নিয়ে গিয়েছিল । আমিও গিয়েছিলাম ভাল ভালয় তবে ......
-নাম কি তোমার ?
- বাবা মা একটা রাখছেন , আমি একটা রাখছি , আপনার মেয়ে ডাকে আরেক নামে তার নাকি আমার নাম পছন্দ না । কোণটা শুনতে চান ? আপনি চাইলেও একটা নাম রাখতে পারেন ।
- বেয়াদ্দপ কোনহানকার !
- নামটা পছন্দ হয়নাই। অন্য আরেকটা বলেন ।
-কি কইলা ?
- জি কিছুনা । পরের প্রশ্ন ।
-করো কি তুমি ?
-জি সভাপতি ।
-কিসের ?
-‘চিরদিন বেকার রহিবো’ সংস্থার !!
-ফাইজলামি করো?
-ছিঃ ছিঃ, আস্তাগফিরুল্লাহ...!! আপনার এক পা গেছে গিয়া কবরে,আপনার সাথে
ফাইজলামি করা মানায় আমার??
- কি কইলা ?
- আঙ্কেল আমার পরিচিত নাক কান, গলার ডাক্তার আছে ।
-তো আমি কি করুম ?
- আপনেই জানেন ।
-বাবা কী করে?
- আব্বুজি বাসার অর্থ মন্ত্রী, আমার খরচ চালায়।
-তুমি সোজা কইরা কথা বলতে পারো নাহ??
-জি নাহ, আমার মুখের ২ টা দাঁত বাঁকা !! দেখেন—ইইইইই
-অসভ্য কোথাকার !
-অসভ্য কোথাকার তা আমি কেমনে জানবো?? তবে উগান্ডার হইতে পারে !
পড়াশোনা কদ্দুর??
- পড়াশোনা বহুদুর, বহু বছর ধইরা চলছে এখনো শেষ হয় নাই...!! শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিবিএ তে ঝুইলা আছে ।
-বিবিএ?? ধুর, এইটা তোহ এখন রিক্সাআলাও পড়তে পারে !
-আঙ্কেল আপনি কতোটুকু পড়াশোনা করছিলেন?
- ওই জমানার ম্যাট্রিক পাস । বহুত দাম ছিল তখন আমার ।
-আঙ্কেল এই জমানায় তোহ আপনি রিক্সাআলাও হইতে পারবেন নাহ !! বিবিএ টাও তোহ নাই আপনার !! তবে ফুচকা কিংবা আইস্ক্রিমআলা হওয়ার ট্রাই মারতে পারেন...!!
-ফাউল !
-আঙ্কেল আমি ফুটবল নাহ ক্রিকেট পছন্দ করি...!! ক্রিস জেইল আর হেডাম জিলকৃষ্ট এর ব্যাটিং এ তো পুরা মাথাই নষ্ট হইয়া যায় আমার !!
-কার কার নাম কইলা ?
- ও তাদের আপনি চিনবেন না । তবে ক্রিকেটেও কিন্তু ফাউল আছে একটা ।
-কি ফাউল পাইলা আবার ক্রিকেটের??
-ভিরাট কোহলি !! তারে দেখলেই বুঝা যায় শয়তানে তারে হুদাই নারেচারে , একলা একলাই গালাগালি করে, তার কান্ধে শয়তান যে কয়টা আছে তা এক বিরাট গবেষনার বিষয় !!
-অ ! এই জমানার পোলা প্রেম টেম, ফষ্টি-নষ্টি করোনা??
- প্রেম তো আপনার মেয়ের সাথেই করি এইটা কেমন প্রশ্ন জিগ্যেস করলেন ? তবে নষ্টি-ফষ্টি করার ধান্দা নাই আমার !
-অসম্ভব !! তুমি মাংস খাবা আর ঝোল খাবা নাহ তা কেমনে হয়??
-অসম্ভব কে সম্ভব করাই জলিল এর কাজ...!
-জলিল কে ??
-ব্রেড পিট এর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী !!!!
-ব্রেড পিট কে??
--হলিউড এর ইমরান হাসমি, কথায় কথায় নায়িকাদের জড়ায় ধরে !!
-তার মানে জলিল ও তাই করে ?? ছি ছি, কেয়ামত এর আর বেশি বাকি নাই, দেশ শেষ !!
-জি। যেই গরম পরছে মনে হয় কেয়ামত আসন্ন !! হুদাই আমি এতদিন গরম বাড়ার ভুল ব্যাখ্যা দিতাম !!
-কি ব্যাখ্যা??
- থাক আপনারে না বলি। ব্যাখ্যা শুনলে আপনার সহ্য হবে না । প্রেসার বাইরা যাবে ।
-ছি ছি, তুমি যাও মিয়া সামনে থেইকা...!!
--জি ধন্যবাদ !!
লোকটার প্রেসার বেড়েছিল কিনা জানা নেই , তবে জেরিনের সাথে আর দেখা হয়নি । ফোন দিয়েছিলাম । বলেছিল , ‘আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবা না ’। জবাবে কোনও ভুমিকা ছাড়াই বলেছিলাম “ উক্কে ’’ ।
শুধুমাত্র জেরিনের সাথেই আমার সম্পর্কের ইতি এভাবে ঘটেছিল । তবে একটা সময় আফসোস ছিল আমার । প্রেমে পড়েছি , সম্পর্কে জড়িয়েছি ঠিকই, তবে কাউকে ভালবাসতে পারিনি মনের মত । আমার সাহিত্যিক বন্ধু ফাইয়াজ আমার এইসব কাণ্ডকারখানা দেখে বার বার বলত আমি হতবাক, আমি নির্বাক ! জবাবে বলতাম , চুপ থাক বুরবাক ।
ছেলেটা ভাল লিখালিখি করে। বেশ কয়েকটা কবিতার বই বের হয়েছে তার । আমি সময় পেলে মাঝে মধ্যে পড়তাম তার লিখা । কিন্তু কখনও তাকে বলতাম না । আমার সামনে কবিতা বলা শুরু করলে উল্টো আরও বকে দিতাম । ফাইয়াজ আমাকে নিয়েও লিখেছিল কিছু লাইন ।
যখন জীবনটা মনে হবে এক আলো ছায়ার খেলা
তখন কেটে যাবে জীবন থেকে অনেকটা বেলা
রয়ে যাবে তুমি এক ল্যাম্পপোস্টের মত স্থির
না আসবে আলো না আসবে আধার
বিষাদময় শুন্য মনে ছড়াবেনা আবির।
লিখাটা ভাল লেগেছিল তবে দুষ্টামি করেই আবার ঝারি মেরে বলেছিলাম , ‘আরেকটা বার যদি আমার সামনে তোর কবিতা কইছস তো তোর হাড্ডি ভাইঙ্গা গুড্ডি উড়াবো ।’
ফাইয়াজ ঠিকই বলেছিল হয়ত । ল্যাম্পপোস্টের মতই স্থির হয়ে আছি এই হাসপাতালের বেডে তবে আলোহীন । কোথাও আড্ডা দেয়া নেই , ঘুরতে যাওয়া নেই । শুধু রুমে আর উঠোনটায় হালকা হাটাহাটি করা আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরব কবে সেটার দিন গননা করা । মনে কোন আবির ছড়ায় না আর । মাঝে মধ্যে বন্ধুরা আসে, কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়।
হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী রোগীর সাথে বাইরের মানুষদের বেশীক্ষণ থাকতে নেই । বড়ই অসামাজিক আচরন লাগে ডাক্তার এবং নার্সদের যখন তাদের চলে যেতে বলে । দরজার পর্দার ফাকে রুমের বাইরে ডাক্তারের সাথে বাবাকে কথা বলতে দেখলাম । শুধু বলতে শুনলাম অপারেশনের পর দুটা বিষয় হতে পারে । হয় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে নয়ত আর জ্ঞান ফিরবেনা । মারা যেতে পারে। আল্লাহকে স্মরণ করুন । ডাক্তারকে চলে যেতে দেখলাম । মিষ্টির বাবা আর মিষ্টিকেও দেখলাম বাবার সাথে । মিষ্টি অঝোরে কাঁদছে ।
মিষ্টির সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে । লোকে বলে , এসব সামাজিক নেটওয়ার্কে পরিচিত হওয়া মানুষদের বিশ্বাস করতে নেই । আমি মানতাম না কথাটা এবং আমি মিষ্টিকে বিশ্বাস করে ঠকিনি । কেন যেন অবিশ্বাস করতে পারতাম না মেয়েটাকে । জীবনে কেউ না কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে । পরিচিত হওয়ার জন্য কিংবা একে অপরকে জানার জন্য শুধু দরকার একটা মাধ্যম ।
আমাদের ক্ষেত্রে ফেসবুকটাই মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে । আমি তখনও জানতাম না যে মেয়েটা আমাদের ২ বাড়ির পরের বাড়িতেই থাকে। কিন্তু সে জানত । আমার ছবি দেয়া ছিল আর তার ছিল না । তার ছবি দেখার পরই তার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। মেয়েটা হাসি মুখে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিল আমায় দেখে । সত্যি বলতে মেয়েটাকে আমি ভালবেসেছিলাম এবং সত্যিকার অর্থেই ভালবেসেছিলাম।
বেশ আগে থেকেই হালকা মাথা ব্যথা করত সে হিসেবে বলা যায় অসুস্থ বোধ করাটা অনেকদিনের পুরনো । বলতাম না কাউকে । মাঝে মাঝে যন্ত্রণাটা অসহ্য মনে হত । এমনও হয়েছে চিৎকার চেচামেচি করেছি যন্ত্রনায়। যতক্ষণ পারতাম ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতাম । বাবা অফিসে যাবার সময় দেখতেন ঘুমাচ্ছি , ফেরার পরেও দেখতেন ঘুমাচ্ছি । মাঝ রাতে জেগে উঠতাম ।
তখন মিষ্টিকে ফোন দিতাম কিন্তু কথা বলতাম না , শুধু তার আওয়াজটা শুনতাম । ভাল লাগত এমন পাগলামি করতে । মেজাজটা খিটখিটে হয়ে গিয়েছিল । দিনকে দিন আমার উচ্ছলতা কমে যাওয়ায় বাবা চিন্তিত হয়ে পড়েন । পাশের ফ্ল্যাটের আন্টিকে বলে যেতেন যাতে মাঝে মধ্যে আমাকে দেখে যান। তিনি আসতেন ঠিকই আর আমিও তাকে কিছু হয়নি বলে ফিরিয়ে দিতাম । মাঝে মধ্যে খাবার রেঁধে পাঠাতেন । পরেই থাকত সেগুলো ।
মানুষের উপস্থিতি অসহ্য লাগা শুরু হয়েছিল । ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বাবা । আমি যেতে চাইতাম না । মিষ্টির সাথে যোগাযোগ কমে গিয়েছিল । মাঝে মধ্যে ফোন ধরতাম । সে বারবার আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কে জিগ্যেস করত । এটা করোনা কেন ওটা কেন করোনা বলেই যেত । আমি কিছু বলতাম না , চুপ করে শুনে যেতাম । কথার উত্তর দিচ্ছিনা কেন জিগ্যেস করলে বলতাম কিছু হয়নি , ঠিক হয়ে যাবে , চিন্তার কিছু নেই ।
সেদিন সন্ধ্যায় যন্ত্রণাটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। মাথা ধরে চিৎকার করতে থাকি। চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল । কোনরকম মাথায় পানি ঢালি কতক্ষণ । যন্ত্রণা একটু কমলেও স্বস্তি পাচ্ছিলাম না । কোন মেডিসিনও খুঁজে পাচ্ছিলাম না ঘরে । বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে । দিক্বিদিক হারিয়ে বেসামাল ভাবে ছুটছি । কতক্ষণ ছুটেছি খেয়াল নেই । রাস্তায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারানোর আগে ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখেছিলাম দূর হতে মিষ্টি দৌড়ে আমার দিকে ছুটে আসছে ।
অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবার আগে বাবাকে দেখতে চাইলাম। আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখলেন কতক্ষণ। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন কিছু হবে না । সব ঠিক হয়ে যাবে। মিষ্টিকে দেখলাম দূরে দাড়িয়ে কাঁদছে । কিছু বললাম না তবে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে । থিয়েটারে নিয়ে যাবার পর ডাক্তারকে একবার জিগ্যেস করলাম , ডাক্তার, আমি শুধু জানতে চাই আমার সমস্যাটা কি ?
ডাক্তার বললেন , ছোটোখাটো একটা টিউমার যার কারনে মস্তিস্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্বাভাবিক অক্সিজেন পাচ্ছেনা যার কারনে মাথা যন্ত্রণা করে । অপারেশনের পর সব ঠিক হয়ে যাবে । চিন্তার কিছু নেই । সিরিঞ্জে করে তরল পদার্থ প্রবেশ করানো হল দেহে । তলিয়ে গেলাম ফের অন্ধকার দুনিয়ায়।
ক’ ঘণ্টা কেটে গেছে জানিনা । জ্ঞান আসার পরও তাকাতে পারছি না । ঘোলাটে আর বিদঘুটে লাগছে সব । মাথাটা পাথরের মত ভার হয়ে আছে । ব্যান্ডেজ লাগানো , নাড়াতে পারছি না । যন্ত্রণাটা কমেনি বরং বাড়ছেই । আসেপাশে মনে হচ্ছে অনেকের অস্তিত্ব । আমার হালকা নড়াচড়া দেখে হয়ত তারা আমায় ডাকছে , চিৎকার করে ডাকছে ।
কেউ আমার জ্ঞান ফেরার আনন্দে ডাকছে , কেউ হয়ত আমি উত্তর দিচ্ছি না কেন এই দুশ্চিন্তায় । কিছুই দেখতে পারছিনা । শোনার শক্তিও কমে যাচ্ছে । জ্ঞানটা হয়ত ফিরেছে শেষ বারের মত কাছের মানুষগুলোর কথার আওয়াজ গুলো শোনার জন্য । মনে হল ক্রমেই অনুভুতি হারাচ্ছি । শক্তি হারিয়ে ফেলছি । চোখের আলো কমে যাচ্ছে । চোখের সামনে ঘোলাটে ভাবটা সরে যাচ্ছে ।
এক ছায়া গ্রাস করে ফেলছে । আধারে নেমে যাচ্ছি আমি। আলো ছায়ার খেলায় হেরে যাচ্ছি , হারিয়ে যাচ্ছি জীবন থেকে । ছায়ার মাঝে দূর থেকে একটা আলো চোখে লাগছে । কে ওখানে ? মা ? মা দাড়িয়ে আছেন ! আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মা দাড়িয়ে আছেন । আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছেন । এগিয়ে যাচ্ছি মায়ের দিকে । মা হাতছানি দিয়ে ডাকছেন আমায় , আমার মা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছেন !
লেখক: মোঃ মঈন উদ্দিন সাব্বির
আজকাল ঠিক তেমন কিছু চিন্তাও করতে পারিনা । পুরনো কিছু স্মৃতি মনে পড়ে অগোচরে । তবে তেমন একটা না । অনেক চাপ পড়ে মস্তিস্কে । মাথাটা বেশ যন্ত্রণা করছে । আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকানোর চেষ্টা করলাম । দপ করে চোখে আলো লেগে মস্তিষ্কের সাথে লড়াই শুরু করে দিল। এ জগতে লড়াই বাদে কিছু নেই। যুদ্ধেও যেমন লড়াই আছে , প্রিয়তমার ভালবাসাতেও লড়াই আছে। পার্থক্য একটাই, একেকটার ধরন আলাদা ।
বা’ পাশ থেকে কথা বলার শব্দ শোনা যাচ্ছে । ভলিউম স্কেল আপ ডাউন করছে । নিশ্চয়ই মিষ্টি হবে । মেয়েটা এভাবে কথা বলে । তার উপর মেয়েটার একা কথা বলার বাতিক আছে । চুপচাপ থাকতে পারেনা । ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ যে কোন বিষয়ে সে একাই নিজের সাথে কথা বলে শেষ করে ফেলবে । তার উচিৎ ছিল বিতার্কিক হওয়া । তবে উচিৎ অনুচিত বিষয়টা ক’জন ভাবে !
আমি জেগে আছি বুঝতে পারলে হুলস্থুর কাণ্ড শুরু করে দিত হয়ত আবারো । ডাক্তার ডেকে এনে আমার অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া , নার্সকে ডেকে মেডিসিনের সময় জিগ্যেস করা, কিছুক্ষণ পর পর এটা খেতে দেয়া ওটা খেতে দেয়া , বার বার জিগ্যেস করা কেমন লাগছে এখন , কিছু লাগবে কিনা !
মিষ্টি অনেক কথা বলে । আমার সাথে যতক্ষণ থাকবে ননস্টপ কথা বলেই যাবে । আমি কথা বলি না বলি সমস্যা নেই , কিন্তু সে বলবে । এত কথা সে কোথায় পায় শুধু সেই জানে । হাসপাতালে আসার পর থেকে শুধু আমার বিষয়েই কথা বলছে । বাবা বলেছে নিশ্চয়ই ! তা না হলে তার জানার কথা না । সে যখন কথা বলবে তখন আমার জন্য অলিখিত নিয়ম হচ্ছে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে আর কথায় কথায় হু হাঁ করা বাধ্যতামুলক ।
তবে এখানে হু হা না করলেও তাকিয়ে থাকি তার দিকে । তার চোখের দিকে । অসম্ভব মায়াবি তার চোখযুগল । মনে হয় যেন বিধাতা অনেক সময় নিয়ে নিপুন কারুকার্যে সাজিয়ে তুলেছেন তার চোখদুটো । গভীরতা আছে অনেক । সেই গভীরতায় হারিয়ে যেতে আমার কোনও দ্বিধা নেই । মিষ্টির একটা গুন যেটা আমার কাছে ভাল লাগে তা হচ্ছে সে আমাকে কখনই একা অনুভব হতে দেয়না । সেটা যেভাবেই হোক । সেই প্রথম দিন থেকে শুরু করে আজ অবধি ।
মা ছোট বেলায় মারা যাবার পর থেকে বাবার হাত ধরে আমার পথচলা । মায়ের আদর তেমন একটা না পেলেও বাবার অঢেল স্নেহ পেয়েছি। বাবা আমার এবং আমি বাবার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন । আমরা একে অন্যের সবচেয়ে ভালবন্ধু । বন্ধুর মতই সব কিছু শেয়ার করি একে অন্যকে । সারাদিন কে কি করলাম রাতের খাবারের টেবিলে এ নিয়ে খোশগল্পে মেতে উঠতাম ।
সবচেয়ে বেশি মজা হত আমার বন্ধুদের নিয়ে আলোচনায়। সেদিনের একটা ঘটনা , ক্লাসের এক বন্ধুর সাথে বাজি ধরেছি যে ক্লাসের সবচেয়ে নিরীহ ছেলেটাকে কোনো কারন ছাড়াই চড় মারব । তো কথা মত ছেলেটার সামনে গেলাম। মায়া লাগল তার চেহারা দেখে । তারপরও যেহেতু বাজিতে জিততে হবে তাই ছেলেটাকে বললাম দেখ ভাই, বাজি লাগছি । এখন তুই কো-অপারেট করলে আস্তে মারব আর সাথে বাজির ৫০% টাকা তোর ।
আর যদি কো-অপারেট না করিস , চিল্লাচিল্লি করিস, তো কিছুই পাবিনা সাথে জোরে একটা চর খাবি । সহজসরল চেহারার ছেলেটার চোখে পানি জমতে দেখেছিলাম । ছেলেটার চোখ ছলছল করছিল । বাজি হেরেছিলাম তাও ছেলেটাকে মারিনি। বাবা শুনে হেসেছিল আর বলেছিল আমার ২য় কাজের জন্য তিনি গর্বিত । তবে ১ম কাজের জন্য বিরক্ত। টাকার দরকার পড়লে এইসব কাজ যাতে না করি ।
বাবার এই কথার রেশ ধরেই মাঝে মধ্যে বাবাকে বিরক্ত করতে মজা পেতাম । কিন্তু মনে হয়না বাবা কখনও বিরক্ত বোধ করেছেন । যদি কখনও এমন হয়েছে পকেটে টাকা নেই , তো সোজা বাবার অফিসে চলে যেতাম । কাজে ব্যস্ত থাকুক না থাকুক সোজা রুমে ঢুকে বলতাম 'পকেটে টাকা নাই, টাকা দাও। না দিলে অফিসে আজকে ধর্মঘট' । বাবা হাসতেন , তার চেয়ারটায় বসতে দিতেন বলতেন স্যার কিছু খাবেন কিনা ! কখনও খেতাম কখনও খেতাম না । হাসি মুখে টাকা দিয়ে দিতেন আর বলতেন স্যার সময় পেলেই আবার আসবেন ।
মাঝে মধ্যে ঘুরতে চলে যেতাম বাপ বেটা মিলে । আমাদের অসংখ্য ছবি আছে ট্যুরের । ছবি দেখলে মনে হত মা পাশে থাকলে হয়ত জীবনটা অন্য রকম হতে পারত । তবুও আফসোস নেই । বিধাতার হিসাব এবং তার বান্দার হিসাব মিলেনা কখনও । এমন কখনও যদি হয়েছে যে আমি কখনও কোনও মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে আছি তাহলেও তা বাবাকে জানাতাম । আমাদের খুনসুটি গুলো শুনে বাবা হাসতেন, মজা পেতেন। আমার বিষয় ছিল আমি আর যাই করি বাবাকে জানিয়ে করব এবং তার নামে কখনও কলংক আসতে দিবনা আমার জন্য ।
ডাক্তার এসে দেখে গেল । কেমন লাগছে জিগ্যেস করতেই হেসে বললাম , এখন একটু ভাল লাগছে । তবে পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটা যে হারে কথা বলে মনে হয় কোন না কোন দিন কানের তালা চাবি ছাড়াই খুলে যাবে । মিষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা হাসছে । অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে মেয়েটা রাগেনি ।
আগে কখনও কিছু বললে অভিমানি হয়ে যেত , গোমড়া মুখে বসে থাকত । তারপর কখনও স্যরি বললে এক গাল হেসে তার রাজ্যের কথার ভাণ্ডার খুলে বসত । ডাক্তার বলল , ‘আপনি খুবই ভাগ্যবান যে এরকম একটা মানুষ আপনি পেয়েছেন। সারাটাক্ষণ আপনার পাশে পাশে থাকে । একটা মুহূর্তও আপনাকে তার চোখের আরাল হতে দেয়না। ’
মুচকি হাসলাম । দরজার ওপারে দেখলাম বাবা দাড়িয়ে আছেন । চোখটা ছলছল করছে উনার । আমি তাকিয়েছি দেখে অন্যদিকে ফিরে তাকালেন । আচ্ছা বাবা কি কাঁদছে ? বাবাকে কখনও কাঁদতে দেখিনি। আচ্ছা বাবা কাঁদছে কেন ? ডাক্তারকে জিগ্যেস করলাম , আমার অসুখটা কি ? মাথা এত যন্ত্রনা করে কেন ? ডাক্তার বলল , ‘ তেমন বড় কিছু না ।
ঠিক হয়ে যাবে ।’ আমার মনে হল ডাক্তার কিছু লুকালো আমার কাছে । এতটুকু বোধশক্তি তো আমার আছেই এটা বুঝার জন্য ! পাশে তাকিয়ে দেখলাম মিষ্টি জানালার ধারে দাড়িয়ে উদাস ভঙ্গিতে বাইরে তাকিয়ে আছে । সেও কি কাঁদছে ? বোঝা যাচ্ছে না । অন্তরের ক্রন্দন বড় বেশি কষ্টের ।
বহুদিন হয়ে গেছে বন্ধু আর এলাকার ভাইদের সাথে দেখা হয়না । তাদের কাছে আমার পরিচিতি অনেকটা বিশেষ ধরনের। “আমার সারাজীবনে প্রেমের আনাগনা এতই বেশি ছিল যে একলা থাকার সময় পাইনি” আমার অতি প্রচলিত উক্তিটা তারা এখন নিজেদের জীবনে ফলাতে চেষ্টা চালাচ্ছে । ফলাফল ? বোতল ছাড়া দেবদাস !একাই থেকে যাচ্ছে । বিষয়টা হাস্যকরই বটে ।
একটা বিষয়ে বরাবরই বন্ধু এবং ভাইদের সাথে আমার তর্ক লাগত । বিষয়টা হচ্ছে প্রেম এবং ভালবাসার ভিন্নতা । প্রেম হচ্ছে বহুমুখী । যে কেউ সময়ে অসময়ে যার তার প্রেমে পড়তে পারে । বিষয়টা হচ্ছে মোহের মত। মোহ কেটে গেলে যেমন আকর্ষণ কমে যায় ঠিক তেমনই একটা সময় গেলে সেই প্রেম প্রেম ভাব উবে যায় । । তবে ভালবাসা হচ্ছে কারো প্রেমময় সম্পর্কের পরিনতি , যেটা স্থায়ী ।
কিন্তু ছোট যারা আছে তারা আমার কথা শুনে হাসাহাসি করে আর টিপ্পনী কাটে একে অপরকে । আমি বলতাম , তোদের অভিজ্ঞতা কমতো ! তোরা হচ্ছিস বাচ্চা পোলাপান , এইসব বিষয়ে তোরা বুঝবিনা । তাদের দেখানোর জন্য কোন এক বড় ভাইকে আমার কথার প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য যদি বলতাম ভাই, কথা সত্যি কিনা ? তখন তিনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলতেন আমিও এককালে ভালবাসতাম একজনরে ।
তিনি শুরু করতেন তার কথা আর আমরা তার পিছন দিয়ে একে একে বের হয়ে যেতাম । ভালবাসায় গদগদ হয়ে ভাইয়েরা হয়েছে আটখানা আর এই ছোট ভাইরা প্রেমে পড়ে ভালবাসা আদায় করার চেষ্টা চালাচ্ছে বারোয়ানা । আমার কোন প্রেমই বেশিদিন টিকেনি বিচিত্র সব কারনে । তবে বিদায়ের বেলায় কেউ কখনও গোমরা মুখে ফিরিনি । হাসিমুখে দা ইন্ড হয়েছে সব।
নিজে হাসতে আর মানুষকে হাসাতে ভালবাসি বলেই সম্ভব হয়েছে । তবে সবচেয়ে বেশি মজা লাগে আর হাসি পায় জেরিনের সাথে সম্পর্কে ইতির কথা মনে পড়লে । বেচারা তার বাবার সাথে দেখা করাতে নিয়ে গিয়েছিল । আমিও গিয়েছিলাম ভাল ভালয় তবে ......
-নাম কি তোমার ?
- বাবা মা একটা রাখছেন , আমি একটা রাখছি , আপনার মেয়ে ডাকে আরেক নামে তার নাকি আমার নাম পছন্দ না । কোণটা শুনতে চান ? আপনি চাইলেও একটা নাম রাখতে পারেন ।
- বেয়াদ্দপ কোনহানকার !
- নামটা পছন্দ হয়নাই। অন্য আরেকটা বলেন ।
-কি কইলা ?
- জি কিছুনা । পরের প্রশ্ন ।
-করো কি তুমি ?
-জি সভাপতি ।
-কিসের ?
-‘চিরদিন বেকার রহিবো’ সংস্থার !!
-ফাইজলামি করো?
-ছিঃ ছিঃ, আস্তাগফিরুল্লাহ...!! আপনার এক পা গেছে গিয়া কবরে,আপনার সাথে
ফাইজলামি করা মানায় আমার??
- কি কইলা ?
- আঙ্কেল আমার পরিচিত নাক কান, গলার ডাক্তার আছে ।
-তো আমি কি করুম ?
- আপনেই জানেন ।
-বাবা কী করে?
- আব্বুজি বাসার অর্থ মন্ত্রী, আমার খরচ চালায়।
-তুমি সোজা কইরা কথা বলতে পারো নাহ??
-জি নাহ, আমার মুখের ২ টা দাঁত বাঁকা !! দেখেন—ইইইইই
-অসভ্য কোথাকার !
-অসভ্য কোথাকার তা আমি কেমনে জানবো?? তবে উগান্ডার হইতে পারে !
পড়াশোনা কদ্দুর??
- পড়াশোনা বহুদুর, বহু বছর ধইরা চলছে এখনো শেষ হয় নাই...!! শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিবিএ তে ঝুইলা আছে ।
-বিবিএ?? ধুর, এইটা তোহ এখন রিক্সাআলাও পড়তে পারে !
-আঙ্কেল আপনি কতোটুকু পড়াশোনা করছিলেন?
- ওই জমানার ম্যাট্রিক পাস । বহুত দাম ছিল তখন আমার ।
-আঙ্কেল এই জমানায় তোহ আপনি রিক্সাআলাও হইতে পারবেন নাহ !! বিবিএ টাও তোহ নাই আপনার !! তবে ফুচকা কিংবা আইস্ক্রিমআলা হওয়ার ট্রাই মারতে পারেন...!!
-ফাউল !
-আঙ্কেল আমি ফুটবল নাহ ক্রিকেট পছন্দ করি...!! ক্রিস জেইল আর হেডাম জিলকৃষ্ট এর ব্যাটিং এ তো পুরা মাথাই নষ্ট হইয়া যায় আমার !!
-কার কার নাম কইলা ?
- ও তাদের আপনি চিনবেন না । তবে ক্রিকেটেও কিন্তু ফাউল আছে একটা ।
-কি ফাউল পাইলা আবার ক্রিকেটের??
-ভিরাট কোহলি !! তারে দেখলেই বুঝা যায় শয়তানে তারে হুদাই নারেচারে , একলা একলাই গালাগালি করে, তার কান্ধে শয়তান যে কয়টা আছে তা এক বিরাট গবেষনার বিষয় !!
-অ ! এই জমানার পোলা প্রেম টেম, ফষ্টি-নষ্টি করোনা??
- প্রেম তো আপনার মেয়ের সাথেই করি এইটা কেমন প্রশ্ন জিগ্যেস করলেন ? তবে নষ্টি-ফষ্টি করার ধান্দা নাই আমার !
-অসম্ভব !! তুমি মাংস খাবা আর ঝোল খাবা নাহ তা কেমনে হয়??
-অসম্ভব কে সম্ভব করাই জলিল এর কাজ...!
-জলিল কে ??
-ব্রেড পিট এর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী !!!!
-ব্রেড পিট কে??
--হলিউড এর ইমরান হাসমি, কথায় কথায় নায়িকাদের জড়ায় ধরে !!
-তার মানে জলিল ও তাই করে ?? ছি ছি, কেয়ামত এর আর বেশি বাকি নাই, দেশ শেষ !!
-জি। যেই গরম পরছে মনে হয় কেয়ামত আসন্ন !! হুদাই আমি এতদিন গরম বাড়ার ভুল ব্যাখ্যা দিতাম !!
-কি ব্যাখ্যা??
- থাক আপনারে না বলি। ব্যাখ্যা শুনলে আপনার সহ্য হবে না । প্রেসার বাইরা যাবে ।
-ছি ছি, তুমি যাও মিয়া সামনে থেইকা...!!
--জি ধন্যবাদ !!
লোকটার প্রেসার বেড়েছিল কিনা জানা নেই , তবে জেরিনের সাথে আর দেখা হয়নি । ফোন দিয়েছিলাম । বলেছিল , ‘আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করবা না ’। জবাবে কোনও ভুমিকা ছাড়াই বলেছিলাম “ উক্কে ’’ ।
শুধুমাত্র জেরিনের সাথেই আমার সম্পর্কের ইতি এভাবে ঘটেছিল । তবে একটা সময় আফসোস ছিল আমার । প্রেমে পড়েছি , সম্পর্কে জড়িয়েছি ঠিকই, তবে কাউকে ভালবাসতে পারিনি মনের মত । আমার সাহিত্যিক বন্ধু ফাইয়াজ আমার এইসব কাণ্ডকারখানা দেখে বার বার বলত আমি হতবাক, আমি নির্বাক ! জবাবে বলতাম , চুপ থাক বুরবাক ।
ছেলেটা ভাল লিখালিখি করে। বেশ কয়েকটা কবিতার বই বের হয়েছে তার । আমি সময় পেলে মাঝে মধ্যে পড়তাম তার লিখা । কিন্তু কখনও তাকে বলতাম না । আমার সামনে কবিতা বলা শুরু করলে উল্টো আরও বকে দিতাম । ফাইয়াজ আমাকে নিয়েও লিখেছিল কিছু লাইন ।
যখন জীবনটা মনে হবে এক আলো ছায়ার খেলা
তখন কেটে যাবে জীবন থেকে অনেকটা বেলা
রয়ে যাবে তুমি এক ল্যাম্পপোস্টের মত স্থির
না আসবে আলো না আসবে আধার
বিষাদময় শুন্য মনে ছড়াবেনা আবির।
লিখাটা ভাল লেগেছিল তবে দুষ্টামি করেই আবার ঝারি মেরে বলেছিলাম , ‘আরেকটা বার যদি আমার সামনে তোর কবিতা কইছস তো তোর হাড্ডি ভাইঙ্গা গুড্ডি উড়াবো ।’
ফাইয়াজ ঠিকই বলেছিল হয়ত । ল্যাম্পপোস্টের মতই স্থির হয়ে আছি এই হাসপাতালের বেডে তবে আলোহীন । কোথাও আড্ডা দেয়া নেই , ঘুরতে যাওয়া নেই । শুধু রুমে আর উঠোনটায় হালকা হাটাহাটি করা আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরব কবে সেটার দিন গননা করা । মনে কোন আবির ছড়ায় না আর । মাঝে মধ্যে বন্ধুরা আসে, কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়।
হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী রোগীর সাথে বাইরের মানুষদের বেশীক্ষণ থাকতে নেই । বড়ই অসামাজিক আচরন লাগে ডাক্তার এবং নার্সদের যখন তাদের চলে যেতে বলে । দরজার পর্দার ফাকে রুমের বাইরে ডাক্তারের সাথে বাবাকে কথা বলতে দেখলাম । শুধু বলতে শুনলাম অপারেশনের পর দুটা বিষয় হতে পারে । হয় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে নয়ত আর জ্ঞান ফিরবেনা । মারা যেতে পারে। আল্লাহকে স্মরণ করুন । ডাক্তারকে চলে যেতে দেখলাম । মিষ্টির বাবা আর মিষ্টিকেও দেখলাম বাবার সাথে । মিষ্টি অঝোরে কাঁদছে ।
মিষ্টির সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে । লোকে বলে , এসব সামাজিক নেটওয়ার্কে পরিচিত হওয়া মানুষদের বিশ্বাস করতে নেই । আমি মানতাম না কথাটা এবং আমি মিষ্টিকে বিশ্বাস করে ঠকিনি । কেন যেন অবিশ্বাস করতে পারতাম না মেয়েটাকে । জীবনে কেউ না কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করে । পরিচিত হওয়ার জন্য কিংবা একে অপরকে জানার জন্য শুধু দরকার একটা মাধ্যম ।
আমাদের ক্ষেত্রে ফেসবুকটাই মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে । আমি তখনও জানতাম না যে মেয়েটা আমাদের ২ বাড়ির পরের বাড়িতেই থাকে। কিন্তু সে জানত । আমার ছবি দেয়া ছিল আর তার ছিল না । তার ছবি দেখার পরই তার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। মেয়েটা হাসি মুখে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিল আমায় দেখে । সত্যি বলতে মেয়েটাকে আমি ভালবেসেছিলাম এবং সত্যিকার অর্থেই ভালবেসেছিলাম।
বেশ আগে থেকেই হালকা মাথা ব্যথা করত সে হিসেবে বলা যায় অসুস্থ বোধ করাটা অনেকদিনের পুরনো । বলতাম না কাউকে । মাঝে মাঝে যন্ত্রণাটা অসহ্য মনে হত । এমনও হয়েছে চিৎকার চেচামেচি করেছি যন্ত্রনায়। যতক্ষণ পারতাম ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতাম । বাবা অফিসে যাবার সময় দেখতেন ঘুমাচ্ছি , ফেরার পরেও দেখতেন ঘুমাচ্ছি । মাঝ রাতে জেগে উঠতাম ।
তখন মিষ্টিকে ফোন দিতাম কিন্তু কথা বলতাম না , শুধু তার আওয়াজটা শুনতাম । ভাল লাগত এমন পাগলামি করতে । মেজাজটা খিটখিটে হয়ে গিয়েছিল । দিনকে দিন আমার উচ্ছলতা কমে যাওয়ায় বাবা চিন্তিত হয়ে পড়েন । পাশের ফ্ল্যাটের আন্টিকে বলে যেতেন যাতে মাঝে মধ্যে আমাকে দেখে যান। তিনি আসতেন ঠিকই আর আমিও তাকে কিছু হয়নি বলে ফিরিয়ে দিতাম । মাঝে মধ্যে খাবার রেঁধে পাঠাতেন । পরেই থাকত সেগুলো ।
মানুষের উপস্থিতি অসহ্য লাগা শুরু হয়েছিল । ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বাবা । আমি যেতে চাইতাম না । মিষ্টির সাথে যোগাযোগ কমে গিয়েছিল । মাঝে মধ্যে ফোন ধরতাম । সে বারবার আমার স্বাস্থ্য সম্পর্কে জিগ্যেস করত । এটা করোনা কেন ওটা কেন করোনা বলেই যেত । আমি কিছু বলতাম না , চুপ করে শুনে যেতাম । কথার উত্তর দিচ্ছিনা কেন জিগ্যেস করলে বলতাম কিছু হয়নি , ঠিক হয়ে যাবে , চিন্তার কিছু নেই ।
সেদিন সন্ধ্যায় যন্ত্রণাটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। মাথা ধরে চিৎকার করতে থাকি। চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল । কোনরকম মাথায় পানি ঢালি কতক্ষণ । যন্ত্রণা একটু কমলেও স্বস্তি পাচ্ছিলাম না । কোন মেডিসিনও খুঁজে পাচ্ছিলাম না ঘরে । বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে । দিক্বিদিক হারিয়ে বেসামাল ভাবে ছুটছি । কতক্ষণ ছুটেছি খেয়াল নেই । রাস্তায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারানোর আগে ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখেছিলাম দূর হতে মিষ্টি দৌড়ে আমার দিকে ছুটে আসছে ।
অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবার আগে বাবাকে দেখতে চাইলাম। আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখলেন কতক্ষণ। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। বললেন কিছু হবে না । সব ঠিক হয়ে যাবে। মিষ্টিকে দেখলাম দূরে দাড়িয়ে কাঁদছে । কিছু বললাম না তবে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে । থিয়েটারে নিয়ে যাবার পর ডাক্তারকে একবার জিগ্যেস করলাম , ডাক্তার, আমি শুধু জানতে চাই আমার সমস্যাটা কি ?
ডাক্তার বললেন , ছোটোখাটো একটা টিউমার যার কারনে মস্তিস্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্বাভাবিক অক্সিজেন পাচ্ছেনা যার কারনে মাথা যন্ত্রণা করে । অপারেশনের পর সব ঠিক হয়ে যাবে । চিন্তার কিছু নেই । সিরিঞ্জে করে তরল পদার্থ প্রবেশ করানো হল দেহে । তলিয়ে গেলাম ফের অন্ধকার দুনিয়ায়।
ক’ ঘণ্টা কেটে গেছে জানিনা । জ্ঞান আসার পরও তাকাতে পারছি না । ঘোলাটে আর বিদঘুটে লাগছে সব । মাথাটা পাথরের মত ভার হয়ে আছে । ব্যান্ডেজ লাগানো , নাড়াতে পারছি না । যন্ত্রণাটা কমেনি বরং বাড়ছেই । আসেপাশে মনে হচ্ছে অনেকের অস্তিত্ব । আমার হালকা নড়াচড়া দেখে হয়ত তারা আমায় ডাকছে , চিৎকার করে ডাকছে ।
কেউ আমার জ্ঞান ফেরার আনন্দে ডাকছে , কেউ হয়ত আমি উত্তর দিচ্ছি না কেন এই দুশ্চিন্তায় । কিছুই দেখতে পারছিনা । শোনার শক্তিও কমে যাচ্ছে । জ্ঞানটা হয়ত ফিরেছে শেষ বারের মত কাছের মানুষগুলোর কথার আওয়াজ গুলো শোনার জন্য । মনে হল ক্রমেই অনুভুতি হারাচ্ছি । শক্তি হারিয়ে ফেলছি । চোখের আলো কমে যাচ্ছে । চোখের সামনে ঘোলাটে ভাবটা সরে যাচ্ছে ।
এক ছায়া গ্রাস করে ফেলছে । আধারে নেমে যাচ্ছি আমি। আলো ছায়ার খেলায় হেরে যাচ্ছি , হারিয়ে যাচ্ছি জীবন থেকে । ছায়ার মাঝে দূর থেকে একটা আলো চোখে লাগছে । কে ওখানে ? মা ? মা দাড়িয়ে আছেন ! আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মা দাড়িয়ে আছেন । আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছেন । এগিয়ে যাচ্ছি মায়ের দিকে । মা হাতছানি দিয়ে ডাকছেন আমায় , আমার মা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছেন !
লেখক: মোঃ মঈন উদ্দিন সাব্বির
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Ei Golpo Gulo Pore Bastob Jibone Keo Practice Korte Jaben Na, Moja Nin Sudhu"
Ja khusi likhun,kintu lekhok ke ukti kore kono karap comment korben na,eta sob patoker kache onurodh,kono other site link post korben na,tahole coment publish kora hobe na...................