পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৪

আই লাভ ইউ বাবা

অনেক রাত হয়ে গেলো ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঘুম আসছেনা চোখে পায়ে খুব ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে সবাইকে বলেছি সামান্য কেঁটে গেছে ডাক্তার জোর করেই ব্যান্ডেজ করে দিল। আসলে সেদিন হঠাৎ আকস্মিক এক্সিডেন্ট এবং পায়ে অনেক বেশী আঘাত মাংস ছিঁড়ে হাড্ডি পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।

বরাবরই আমি চাপা স্বভাবের এমনিতে আমাকে নিয়ে আমার ফিউচার নিয়ে সবার মাঝে অনেক টেনশন তার উপর এসব দুর্ঘটনার কথা শুনে আমার জন্য কেউ কষ্ট করলে নিজের খুব অপরাধ বোধ হবে। তাই ড্রেনে পড়ার কথা বলে বাইক এক্সিডেন্ট এর কথা চাপিয়ে গেলাম। রাত যতই বাড়ছে ততই ব্যাথা বেড়েই চলেছে না আর পারছিনা চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।

এমন সময় রুমে বাবার আগমন যদিও আমার রুমে তিনি তেমন আসেন না আর উনার সাথে আমার তেমন কথাও হয়না কারন উনার চোখে আমি অকর্মা আর নিজের অপছন্দের দলের রাজনীতির সাথে জড়িত তাই আমাকে সহ্য করাটা অসম্ভব। রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ঘুমের অভিনয় করি এত রাতে পায়ে তীব্র ব্যাথা নিয়ে উনার নীতিবাক্য শুনার ইচ্ছেও আমার নেই।

উনি এসে বিছানায় বসলেন পা থেকে কাপড় সরিয়ে ব্যান্ডেজ বাধা পা দেখতে লাগলেন কিছুটা রক্ত দেখে তার দুচোখে অশ্রুর বন্যা শুরু হলো টপটপ করে ঝরে পড়ছে আমার দেহে এ অশ্রুবিন্দু আমার সমস্ত যন্ত্রনা ভুলিয়ে দিচ্ছি এতদিনের সকল অভিযোগ অভিমান ঘুছিয়ে দিচ্ছি অদৃশ্য এক শক্তিতে। আমারও ইচ্ছে হচ্ছে ছোট বেলার মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে বাবার বুকে মাথা গুঁজে কিন্তু বাবার এই অকৃত্রিম ভালবাসা আমি হারাতে চাইনা।

কতদিন ব্যাকুল হৃদয় অপেক্ষা করেছে বাবার স্নেহের স্পর্শের জন্য তা আজ বুঝতে পারছি। পায়ে এখনো ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে কিন্তু এই ব্যাথাটা অনেক প্রিয় মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে এক্সিডেন্ট না হলে বুঝায় হতোনা বাবাকে বাবার এত্ত আন্তরিক ভালবাসাকে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল আমি কিন্তু ঘুমের অভিনয়ে ব্যস্ত আমার কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম বাবার নজর এড়ায় না পাশে পড়ে থাকা হাতপাখা নিয়ে বাতাস করতে লাগলো আমার। না আর অশ্রু থামাতে পারছিনা তাই কাত হয়ে শুয়ে পড়লাম।

রাত প্রায় শেষ হয়ে এলো ফজরের আজান দিচ্ছে। ইস রাতটা যদি শেষ না হতো আর একটু বড় হলে কি ক্ষতি হতো ভালবাসাময় এই রাতটা। ফরজের নামাজ পড়তে বাবা রুমে চলে গেল আমার পাশেই বাবা মার রুম তাই আমিও দেয়ালের পাশে দাঁড়ালাম মাকে ঘুম থেকে ডাকলেন বাবা।

এতক্ষণ কোথায় ছিলে ঘুমাওনি কেন? ছেলেটাকে খুব অবহেলা করো তোমরা আমিতো বাবা তাই ওর পাশে ছিলাম তুমি জানো তোমার ছেলে এক্সিডেন্ট করেছে? আরে না ওতো ড্রেনে পড়েছে। মিথ্যে বলেছে শোন ওকে নিয়ে কাল ভালো ডাক্তারের কাছে যাবে আমি টাকা দিয়েছি বলোনা তাহলে যাবে না ওর দিকে নজর রেখ অনেক অগোছালো ছেলেটা আমি আর কদিন জানিনা আমি চলে গেলে কি করবে ছেলেটা।

বাবার কন্ঠ অনেক ভারী মনে হচ্ছে হয়ত তিনি কাঁদছেন হ্যাঁ কাঁদছেন শাসনের আড়ালে এতদিনের ভালবাসা গুলো অশ্রু হয়ে বেড়িয়ে আসছে। বুকের মাঝে হুহু করে উঠল আসলেই তো কি হবে বাবা না থাকলে না আর ভাবতে পারছিনা আজ নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে এতদিনের সব জানা শুনা ভুল ছিল, ভুল ছিল বাবাকে বুঝার মাঝে তাই ইচ্ছেমত কাঁদলাম। সকালে খুব বকাঝকা করলেন পুর্বের মত অকর্মা, গাধা ইত্যাদি অপমানসুচক শব্দ ব্যবহার করলেন।

কিন্তু আজ আমার মন খারাপ হচ্ছেনা মনে মনে আক্ষেপ হচ্ছেনা বরং খুব হাসি পাচ্ছে একজন দক্ষ অভিনেতার অভিনয় দেখে। আমার হাসি দেখে বাবারও হাসি পাচ্ছে জানি কিন্তু গাম্ভীর্য দিয়ে তা ঢেকে রাখছেন। সারাজীবন আমাদের বাবারা অভিনয় করে যান শাসনের অভিনয় গাম্ভীর্যের অভিনয়। কিন্তু আমাদের উজ্জল ভবিষ্যৎ এর জন্য তাদের এই অভিনয় টুকু করতেই ভালবাসা বুকে চাপা রেখে। আমাদের মা বাবারা সারাজীবন আমাদের তুষ্ট রাখার জন্য আমাদের মাথা উঁচু করার জন্য নিচের মাথা অনেক নিচুতে নামতেও দ্বিধাবোধ করেন না।

তাদের আশা বেশী কিছু নয় জীবনের পড়ন্ত লগ্নে সবার সাথে হেসে খেলে জীবনের ইতি টানা। কিন্তু মাঝেমাঝে হিসেব গুলিয়ে যায় তাদের হাতে গড়া প্রিয় নীড় ছেড়ে দুরে সরে যেতে হয় যতনে মানুষ করা সন্তানেরা একদিন তাদের প্রিয় নীড় ছাড়তে বাধ্য করে এবং তাদের ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালের বন্দী কুটিরে। ইদানীং একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম সামান্য ভুলের কারনে বন্ধু কাছের অনেক মানুষ দুরে চলে যায় মুহুর্তে সেখানে হাজার ভুলের মাঝেও বুকে জড়িয়ে রাখতে পারেন শুধুমাত্র মা বাবা বলেই তাদের ভালবাসার কাছে সব তুচ্ছ নগণ্য।

লেখক: হাসান রুদ্রনীল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ei Golpo Gulo Pore Bastob Jibone Keo Practice Korte Jaben Na, Moja Nin Sudhu"
Ja khusi likhun,kintu lekhok ke ukti kore kono karap comment korben na,eta sob patoker kache onurodh,kono other site link post korben na,tahole coment publish kora hobe na...................